সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
স্বরূপকাঠি প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির পোস্ট ই-সেন্টার সার্ভিসের বেহাল অবস্থা। উপজেলার ২০টি সেন্টারের মধ্যে ৫টি চালু থাকলেও ১৫টি সেন্টারের মালামালের স্থান হয়েছে কারো বাড়ীতে বা ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে করে একদিকে যেমন জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে ডিজিটাল সেবা থেকে অপরদিকে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে চরমভাবে।
জানা গেছে, স্বরূপকাঠি উপজেলায় তিনটি সাব পোস্ট অফিসের আওতায় ২০টি পোস্ট ই-সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের প্রধান ডাকঘরের অধীনে ৬টি, জলাবাড়ী সাব পোস্ট অফিসের অধীনে ৬টি, কৌড়িখাড়া সাব পোস্ট অফিসের অধীনে ৫টি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট সাব পোস্ট অফিসের অধীনে ৩টিসহ মোট ২০টি পোস্ট-ই সেন্টার রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার ওইসব পোস্ট ই-সেন্টারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অস্তিত্বহীন ওইসব সেন্টারে সরকারের দেওয়া লাখ লাখ টাকার ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ মূল্যবান সামগ্রি বছরের পর বছর ফেলে রাখায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ দিন পড়ে থাকতে থাকতে অনেকগুলো ল্যাপটপ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবী উদ্যোক্তা ও পোস্ট মাস্টারের। কার্যক্রম না থাকলেও প্রতিমাসে প্রতিটি কেন্দ্রের বিপরীতে সরকারের খাতে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে জমা করছেন উদ্যোক্তারা। ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা সারানোর জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেন বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ও পোস্ট মাস্টাররা।
উপজেলার প্রধান ডাকঘরের দুজন উদ্যোক্তার মধ্যে একজন উদ্যোক্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছেন। ওইখানে সরকারের দেওয়া ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ ছাড়াও তিনি নিজে আরো ১০টি ল্যাপটপ কিনে সেন্টার চালাচ্ছেন।
ওই কেন্দ্রে বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে ৫০ জন। ওই কেন্দ্রে গ্রাহকদের নানা প্রকার সেবা প্রদান করা হয় বলে তারা জানিয়েছেন। ওই পোস্ট অফিসের আওতাধীন মাহামুদকাঠি, কুড়িয়ানা, ধলহার, সংগীতকাঠি, শান্তিরহাট বন্ধ রয়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ আদৌ জানেনা এমন একটি প্রকল্প আছে।
কৌড়িখাড়া সাব পোস্ট অফিসের অধীনে পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে কৌড়িখাড়া কেন্দ্রটি উদ্যোক্তা মিরাজের খান এন্টারপ্রাইজ নামে মিয়ারহাট বাজারে ও আলকিরহাটের সেন্টারটির উদ্যোক্তা তানিয়া একতা বাজারে চালু রেখেছেন। রাজাবাড়ী পোস্ট অফিসের অধীন কেন্দ্রটি পোস্টমাস্টার গ্রাম ডা.ছিদ্দিকুর রহমান চৌধূরীর জামাতা আশিক চৌধূরী ও মেয়ে সানজিদা উদ্যোক্তা।
পোস্টসেন্টার ও মালামাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সেন্টার বিন্না বাজারে মালামাল উদ্যোক্তা আশিক চৌধুরীর হেফাজতে আছে। বিন্না বাজারে গিয়ে দেখো যায় একটি ঘরের দোতালায় পোস্ট ই-সেন্টারের সাইনবোর্ড লাগানো আছে। কিন্তু সেখানে ই সেন্টারের কোনো কার্যক্রম হয়না। সেখানে অটোরিকশা চালক সমিতির কার্যালয় বিদ্যমান।
আশিক চৌধুরীর বাড়ী গিয়ে জানা যায় তিনি বাড়ীতে থাকেন না। পিরোজপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন এলজি বাটারফ্লাই শোরুমে তিনি চাকরি করেন এবং সেখানেই থাকেন। ল্যাপটপসহ অন্য মালামাল কোথায় আছে জানতে চাইলে আশিকের বাবা মো. মাসুম বিল্লাহ চৌধুরী মালামালগুলো ওই বাড়ীর আলমিরাতে কাপড়-চোপড়ের মধ্যে রাখা অবস্থায় দেখান। এছাড়া মুনিনাগ, চিলতলা কেন্দ্রের অবস্থাও একই রকম।
জলাবাড়ী সাব-পোস্ট অফিসে উদ্যোক্তা অসিত মিস্ত্রী কেন্দ্রটি চালু রয়েছে। ওইখানের অপর উদ্যোক্তা কোনো কাজ করেন না। কামারকাঠি, করফা, মাদ্রা, সমুদয়কাঠি, পূর্ব জলাবাড়ী কোথাও পোস্ট ই-সেন্টারগুলোর কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে সমুদয়কাঠি পোস্ট অফিসের আওতায় পোস্ট মাস্টার আশুতোষ শীলের মেয়ে সীমারানী উদ্যোক্তার কেন্দ্রের ৩টি ল্যাপটপের আশ্রয় হয়েছে বাড়ীর বাক্স ও আলমারির মধ্যে।
সীমা শীল স্বীকার করেছেন তিনি এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী সৃষ্টি করতে পারেননি। পূর্ব জলাবাড়ীতে অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। মাদ্রার পোস্ট মাস্টার তার বাড়ীতে আলমারির বাক্স ও তাকের ওপর রেখে দিয়েছেন। উদ্যোক্তা তার ছোট ছেলে ও মেয়ে। ওই ছেলে ঢাকাতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকরি করেন। তার বড় ছেলে একটি কলেজে আইসিটির টিচার। তিনি একটি ল্যাপটপ নিজে ব্যবহার করেন। শান্তিরহাট কেন্দ্রের মালামাল পোস্ট মাস্টার গ্রাম্য চিকিৎসক কুদ্দস মিয়ার কাছে আছে বলে পোস্টম্যান জানান। কামারকাঠির ও করফা কেন্দ্রের একই অবস্থা।
এছাড়া ঝালকাঠি সদর পোস্ট অফিসের সাব-পোস্ট অফিস শেখের হাটের আওতায় সেহাংগল, মৈশানী ও দুর্গাকাঠিতে তিনটি কেন্দ্র রয়েছে। মৈশানী কেন্দ্রের মালামাল পোস্ট মাস্টার মৈশানী বালিকা বিদ্যালয়ের কেরানী জলিলের বাড়ীতে ছিল। কিছুদিন পূর্বে সাংবাদিকরা ওই বাড়িতে গিয়ে মালামাল দেখতে চাইলে পরে তিনি সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদে সেন্টার খুলেছেন। ওই সেন্টারে সেহাংগল কেন্দ্রের মালামাল রয়েছে। কিন্তু সেহাংগলের উদ্যোক্তা ঢাকায় চাকরি করেন। দূর্গাকাঠির কোনো অস্তিত্ব নেই। উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের বিপরীতে প্রতিমাসে উদ্যোক্তারা ৫০ থেকে দুই শত করে টাকা জমা করে দেন।
এ বিষয়ে বরিশালের ডিপিএমজি মো. মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে সবগুলো কেন্দ্র প্রথম থেকেই চালু রয়েছে বলে দাবী করেন। সরেজমিনে পাওয়া কিছু তথ্য তুলে ধরে তার দেয়া বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করলে তিন তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে কেন্দ্রে সমস্যা আছে স্বীকার করে বলেন, সরকার উদ্যোক্তা নিয়োগ দিয়ে তাদের ভালো মালামাল দিয়েছে। উদ্যোক্তারা মালামালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, নিজ উদ্যোগে মেরামত করে সার্বক্ষণিক চালু রেখে আয় করবে। তার একটি সামান্য অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিবে। কিন্তু তারা সেটা না করে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে অজুহাত দেখিয়ে বসে রয়েছে। অভিযোগ যখন পেয়েছি তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply